ফল ও সবজি চাষ করছেন কৃষকেরা, কিন্তু লাভের গুড় খাচ্ছেন অন্যরা। দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গবেষণাপত্র কৃষকদের আয় বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে বহু প্রশ্ন তুলেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রাহকদের কাছে যে দামে ফল এবং সবজি বিক্রি হয়, তার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ পেয়ে থাকেন কৃষকরা।
কৃষি ও উদ্যানপালন থেকে দুগ্ধ খাতে একই সমস্যা
- ফল ও সবজি বিক্রির বড় অঙ্কের মুনাফা পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে যায়, ফলে কৃষকরা আয় পান খুব কম।
- কৃষকরা দুগ্ধজাত পণ্যের চূড়ান্ত মূল্যের মাত্র ৭০ শতাংশ পান।
- ডিম উৎপাদনকারীরা বিক্রির ৭৫ শতাংশ পান।
- পোল্ট্রি খামারিরা মুরগির খুচরা বিক্রয় মূল্যের মাত্র ৫৬ শতাংশ নিজেদের জন্য রাখতে পারেন।
সবজির দাম বাড়লেও কৃষকদের কোনও লাভ হয় না
আরবিআই-এর গবেষণায় দেখা গেছে, বছরে এক বা দুইবার আবহাওয়া এবং অন্যান্য কারণে টমেটো, পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এ সময় ক্রেতাদের বেশি দামে সবজি কিনতে হয়, কিন্তু যারা এই ফলনের পিছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন, সেই কৃষকদের আয়ের কোনও বৃদ্ধি ঘটে না।
বর্ধিত দামের কত শতাংশ কৃষকের পকেটে আসে
গবেষণায় দেখা গেছে,
- কৃষকরা টমেটোর খুচরা মূল্যের মাত্র ৩৩ শতাংশ পান।
- পেঁয়াজের খুচরা মূল্যের মাত্র ৩৬ শতাংশ পান।
- আলুর বর্ধিত দামের মাত্র ৩৭ শতাংশ পেয়ে থাকেন।
ফলচাষিদের আরও করুণ অবস্থা
বিভিন্ন ফলের ক্ষেত্রে বাজারে দাম বেশি হলেও কৃষকের কপালে জোটে ওই ৩০ শতাংশের আশেপাশে। কলা চাষিরা কলার খুচরা মূল্যের মাত্র ৩১ শতাংশ পান। আঙুর চাষিরা পান মাত্র ৩৫ শতাংশ। আম চাষিরা কিছুটা বেশি পান, যা হল খুচরো মূল্যের ৪৩ শতাংশ।
কৃষি বিশেষজ্ঞ অশোক গুলাটির সমীক্ষায় কৃষি পণ্যের দাম বৃদ্ধি বন্ধ করার উপায়ও প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে, একটি সাধারণ ব্যালেন্স শীট পদ্ধতি ব্যবহার করে মূল্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া যেতে পারে।
- টমেটোর মতো সবজির দাম বৃদ্ধি রোধ করতে, গবেষণাটি কয়েকটি পদক্ষেপের পরামর্শ দেয়:
১. প্রাইভেট মার্কেট (মান্ডি) প্রসারিত করুন।
২. অনলাইন বাজার পোর্টাল, ই-নাম ব্যবহার করুন।
৩. কৃষকদের দলকে উৎসাহিত করুন, চাষের আরও উন্নত দিক শেখান।
৪. ফিউচার ট্রেডিং পুনরায় শুরু করুন।
এটি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, সৌর-চালিত স্টোরেজ ব্যবহার এবং প্রক্রিয়াজাত উদ্ভিজ্জ পণ্যের সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে।
- দুধ, মুরগি এবং ডিমের জন্য, গবেষণাটি পরামর্শ দেয়:
১. সস্তা খাবারের জন্য একটি ফিড ব্যাংক তৈরি করা।
২. ঘাসের জন্য খালি জমি ব্যবহার করা।
৩. উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য পশুপালনে যত্ন রাখা।
- ফলের জন্য, এই উপায় প্রস্তাব করা হয়েছে:
১. স্টোরেজ এবং পরিবহন উন্নত করা।
২. বিভিন্ন ধরনের ফলের প্রচার।
৩. ফসল বীমা অফার।
৪. প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং রপ্তানি বৃদ্ধি।
৫. চাহিদা মেটাতে আমদানি শুল্ক সামঞ্জস্য করা।
৬. পণ্য সরবরাহ ট্র্যাক করতে এবং দাম যাতে না বাড়ে, তা বজায় রাখতে ডিজিটাল টুল ব্যবহার করা।
প্রশ্ন ১: কৃষকরা ফল ও সবজির দামের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ কেন পান?
উত্তর: কৃষকরা ফল ও সবজির জন্য যেটা উৎপাদন করেন, তার দাম বাজারে অনেক বেশি হয়। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের লাভের জন্য বেশি দাম হাঁকান, তাই কৃষকরা কম পান।
প্রশ্ন ২: বাকি লাভ কোথায় যায়?
উত্তর: বাকি লাভ মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে যায়, যারা কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে বেশি দাম নেয়।
প্রশ্ন ৩: RBI রিপোর্টে কী বলছে?
উত্তর: RBI রিপোর্টে বলা হয়েছে যে কৃষকদের প্রাপ্ত অর্থের তুলনায় বাজারে দাম অনেক বেশি, যা কৃষকদের জন্য অস্বস্তিকর।
প্রশ্ন ৪: কৃষকদের সাহায্য করার জন্য কী করা উচিত?
উত্তর: কৃষকদের সমবায় গঠন করা, সরাসরি বাজারে পণ্য বিক্রি করা এবং কৃষি নীতিতে পরিবর্তন আনলে তারা আরও লাভবান হতে পারেন।
প্রশ্ন ৫: ফল ও সবজির দাম বাড়ানোর জন্য কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?
উত্তর: সরকার এবং বিভিন্ন সংগঠন কৃষকদের জন্য ভালো দাম নিশ্চিত করতে কাজ করছে, যাতে তারা উৎপাদনে উৎসাহী হন।