মঙ্গল গ্রহের চাঁদ ফোবোস এবং ডিমোসের উৎপত্তি নিয়ে নতুন গবেষণা সামনে এসেছে। নাসা এবং ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, একটি বড় অ্যাস্টেরয়েড যখন মঙ্গলগ্রহের কাছে এসে পড়েছিল, তখন সেটি ভেঙে গিয়ে যে ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছিল, তা থেকেই এই দুই চাঁদ গঠিত হতে পারে। তাদের কম্পিউটার সিমুলেশন দেখিয়েছে যে, অ্যাস্টেরয়েডের টুকরোগুলো একটি ডিস্কে জড়ো হয়ে ফোবোস এবং ডিমোসে পরিণত হয়েছে। এই নতুন তত্ত্বটি আগের যুক্তিগুলোর তুলনায় অনেক বেশি যুক্তিসঙ্গত এবং জাপানের এমএমএক্স মিশনের মাধ্যমে আরও তথ্য পাওয়া যাবে, যা ফোবোসের নমুনা সংগ্রহ করবে এবং এই গবেষণাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
মঙ্গল গ্রহের চাঁদ ফোবোস এবং ডেমোসের উৎপত্তি নিয়ে নতুন গবেষণা সামনে এসেছে। গবেষকরা বলছেন, এই দুইটি চাঁদ সম্ভবত একটি বৃহৎ অ্যাস্টেরয়েডের অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরি হয়েছে, যা মঙ্গলের মহাকর্ষীয় শক্তির কারণে ধ্বংস হয়েছিল। নাসা এবং ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা উন্নত কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে দেখেছেন, কীভাবে এই ঘটনা ঘটতে পারে। এই আবিষ্কার মঙ্গলের চাঁদগুলোর উৎপত্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের ধোঁয়াশা দূর করেছে।
চাঁদ গঠনের একটি নতুন মডেল
নভেম্বর ২০ তারিখে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, একটি বড় অ্যাস্টেরয়েড যখন মঙ্গল গ্রহের খুব কাছে চলে আসে, তখন তা গ্রহটির রোচ সীমা অতিক্রম করে, যার ফলে এটি ধ্বংস হয়ে যায়। সিমুলেশন অনুযায়ী, এই ধ্বংসাবশেষ ধীরে ধীরে ফোবোস এবং ডেমোসে পরিণত হয়েছে। নাসার বিজ্ঞানী ড. জ্যাকব কেগেরিস বলেন, এই নতুন মডেল আগের তত্ত্বগুলোর তুলনায় একটি “রোমাঞ্চকর” বিকল্প।
ফোবোস এবং ডেমোস সৌরজগতের অন্যান্য চাঁদের তুলনায় অস্বাভাবিক। তাদের অস্বাভাবিক আকৃতি এবং ছোট আকার অ্যাস্টেরয়েডের মতো হলেও, তাদের বৃত্তাকার কক্ষপথ মঙ্গলের সমতল মন্ডলের সাথে মিলে যায়, যা নির্দেশ করে তারা গ্রহটির চারপাশে গঠিত হয়েছে। পূর্বের তত্ত্বগুলি, যেমন প্রভাবের ফলস্বরূপ সৃষ্টি বা অ্যাস্টেরয়েডের ধরে নেওয়া, তাদের বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনি।
সিমুলেশনগুলি উত্তর প্রদান করে
ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপারকম্পিউটার ব্যবহার করে গবেষকরা শত শত সিমুলেশন পরিচালনা করেছেন, যেখানে অ্যাস্টেরয়েডের আকার, গতি এবং মঙ্গলের কাছে থাকা দূরত্বের মতো ভেরিয়েবলগুলি পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলাফল দেখায় যে পর্যাপ্ত ধ্বংসাবশেষ বেঁচে থাকতে পারে, যা গ্রহটির চারপাশে একটি ধ্বংসাবশেষের ডিস্ক তৈরি করে, পরবর্তীতে দুইটি চাঁদ গঠনে সাহায্য করে। নাসার ড. জ্যাক লিসাওয়ার জানান, এই মডেলটি চাঁদ নির্মাণের জন্য উপকরণ বিতরণের একটি কার্যকর উপায় প্রদান করে।
এমএমএক্স মিশনে ভবিষ্যৎ পরীক্ষা
জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সার মার্টিয়ান মুনস এক্সপ্লোরেশন (এমএমএক্স) মিশন ২০২৬ সালে শুরু হবে। এই মিশন ফোবোস থেকে নমুনা নিয়ে আসবে, যা বিশ্লেষণ করে তাদের গঠন পরীক্ষা করা হবে। যদি মঙ্গলের উপাদানের সাথে সাদৃশ্য পাওয়া যায়, তবে এটি প্রভাব তত্ত্বকে সমর্থন করবে, অন্যদিকে অ্যাস্টেরয়েডের মতো উপাদান এই নতুন মডেলকে প্রমাণ করতে পারে।
এই গবেষণা সৌরজগতের ছোট মহাকাশ বস্তুর সাথে গ্রহগুলোর সম্পর্ক বোঝার উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে এবং চাঁদ এবং রিং গঠনের আরও অনুসন্ধানের দরজা খুলে দিতে পারে।
মার্সের চাঁদ কিভাবে তৈরি হয়েছে?
মার্সের চাঁদ দুটি, ফোবোস এবং ডেমোস, সম্ভবত সেই অ্যাস্টেরয়েড থেকে তৈরি হয়েছে যা মঙ্গলগ্রহের কাছে আসার সময় ধরা পড়ে।
কেন অ্যাস্টেরয়েডগুলি মার্সের কাছে আসে?
অ্যাস্টেরয়েডগুলি মহাকাশে ঘোরাফেরা করে এবং কখনও কখনও তাদের কক্ষপথে পরিবর্তন ঘটে, যা তাদের মঙ্গলগ্রহের কাছে নিয়ে আসতে পারে।
ফোবোস এবং ডেমোসের আকার কেমন?
ফোবোস হল বড় এবং ডেমোস তুলনামূলকভাবে ছোট। ফোবোসের ব্যাস প্রায় ২২ কিলোমিটার এবং ডেমোসের প্রায় ১২ কিলোমিটার।
মার্সের চাঁদগুলি কি পৃথিবীর চাঁদের মতো?
না, মার্সের চাঁদগুলি পৃথিবীর চাঁদের মতো নয়। তারা ছোট, অসম আকারের এবং প্রাকৃতিক উপগ্রহ হিসেবে খুবই আলাদা।
মার্সের চাঁদগুলির উপর কি জিনিস আছে?
ফোবোস এবং ডেমোসের পৃষ্ঠে গর্ত এবং খাঁজ রয়েছে, যা তাদের পুরনো এবং মহাকাশে সংঘর্ষের কারণে তৈরি হয়েছে।